গণপূর্তে চাকরির সুযোগে ঢাকায় রাজত্ব করছেন উজির আলী
তিনি একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী; কিন্তু বিগত সরকারের সময় এই কর্মকর্তার সুযোগ-সুবিধা কিংবা প্রভাব ছিলো আব্বাসীয় যুগের ‘উজিরদের’ মতোন।
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
২৯-০৬-২০২৫ ০৯:০৮:৫২ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২৯-০৬-২০২৫ ০৯:০৮:৫২ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি
ফার্সি শব্দ উজির অর্থ উচ্চপদস্থ মন্ত্রী বা উপদেষ্টা। আব্বাসীয় খলিফার যুগে এমন উপাধির প্রচলন শুরু হয়। যা মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশে এখনো প্রচলিত। সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তরে একজন কর্মকর্তা রয়েছেন; যার নাম ‘উজির আলী’। তিনি একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী; কিন্তু বিগত সরকারের সময় এই কর্মকর্তার সুযোগ-সুবিধা কিংবা প্রভাব ছিলো আব্বাসীয় যুগের ‘উজিরদের’ মতোন।
সরকারি এই দপ্তরটিতে এই ধরনের প্রভাবশালী প্রকৌশলীদের একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিলো; তার মধ্যে অনেকে এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। এই তালিকায় উপরের দিকেই রয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. উজির আলী।
একাধিক দুর্নীতি ও বল প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে গড়েছেন অঢেল সম্পদও। এরপরেও বিগত সরকারের ১৭ বছরে মাত্র চার মাস ঢাকার বাইরে ছিলেন এই প্রভাবশালী। গত দেড় বছর ধরে তিনি সংস্থাটির রক্ষণাবেক্ষণ বা মেইটেন্যান্স জোনের দায়িত্বে রয়েছে।
এর আগে এই কর্মকর্তা সংস্থাটির আজিমপুরে দায়িত্বপালনকালে ২০২২ সালের ২২ এপ্রিল জাজেস কমপ্লেক্সে মাঝরাতে কাজ করতে গিয়ে এক নির্মাণ শ্রমিক ১০ তলা থেকে পড়ে মারা যান। ওই ঘটনায় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী উজির আলীর বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ও প্রকল্পে শ্রমিকদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ না করার অভিযোগ ওঠে।
২০ তলা জাজেজ ভবনটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ছিলো নুরানী কনস্ট্রাকশন। ওই কোম্পানির একই সময়ে আজিমপুরে আরো কিছু কাজ চলমান ছিলো। নুরানী কনস্ট্রাকশনের সাথে উজির আলীর কমিশন বাণিজ্যেও বিষয়টি তখন বেশ চাউর ছিলো।
অভিযোগ রয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হওয়ার সুবাদে টেন্ডার বানিজ্যের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন উজির আলী। আজিমপুর কলোনির বিশ তলা ভবন নির্মান প্রকল্পের দুটি ভবন নির্মানের কাজ দেন কুশলী নির্মাতা, তিনটি ভবন নির্মানের কাজ দেন মাসুদ এন্ড কোং ও ৪ টি ভবন নির্মাণের কাজ হাসান এন্ড সন্সকে।
কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ প্রকল্পে যে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে সেখানেও আসে উজির আলীর নাম। তিনি ওই প্রকল্পে মাত্র এক বছরের মতো দায়িত্বে ছিলেন। এই প্রকল্পে বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির সাথে জড়িত মোট ৩৭ কর্মকর্তার নাম ছিলো ওই গোপন তদন্ত কমিটিতে।
২০২১ সালে আলোচিত ঠিকাদার জি কে শামিমকে কাজের অতিরিক্ত বিল পরিশোধের ঘটনা তদন্তের দায়িত্বেও ছিলেন এই কর্মকর্তা। অভিযোগ রয়েছে, এই ঘটনায় জড়িত প্রকৌশলী ফজলুল হক মধুর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে লঘু শাস্তির মাধ্যমে দায়মুক্তি দেন উজির আলী।
যদিও এই কর্মকর্তার দাবি, তিনি যে তদন্ত কমিটিতে ছিলেন, তাদের দায়িত্ব ছিলো কেবলমাত্র কিভাবে টাকা ফেরত আনা যায়, সেটার একটি পরিকল্পণা করা। কাউকে শাস্তি দেয়া কিংবা কারা জড়িত, তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব তাদের ছিলো না।
উজির আলি ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ঢাকা গণপূর্ত রক্ষনাবেক্ষন বিভাগে ১০০% বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা এপিপির কাজ এলটিএম পদ্ধতির পরিবর্তে ওটিএম পদ্ধতিতে দরপত্র আহবান করার অনুমোদন দিয়ে মোটা কমিশন নেন আওয়ামীলীগপন্থি ঠিকাদারদের কাছ থেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণপূর্তের একটি সূত্র বলছে, উজির আলি নামে বেনামে শত শত কোটি টাকার মালিক। তার রয়েছেন উত্তরা ১২ সেক্টরে ৭ নাম্বার রোডে ৬ তলা একটি বাড়ি, ঢাকার বসুন্ধারা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকে একটি ফ্ল্যাট, ধানমন্ডি ষ্টার কাবাব গলিতে ২০০০ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট ও গাজীপুরে ৫ একর জায়গা ক্রয় করে রেখেছেন তার স্ত্রীর নামে। তবে উপরের সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উজির আলী। তিনি জানান, তিনি কখনোই বাড়তি কোন ক্ষমতা প্রয়োগ কোথাও করেননি। দপ্তর থেকে যখন যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তাই পালন করেছেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : News Upload
কমেন্ট বক্স